আজকের বিশ্বে “নারীবাদ” বা Feminism একটি বহুল আলোচিত বিষয়। কেউ এটিকে নারী জাগরণের প্রেরণা বলে মনে করেন, আবার কেউ এটিকে সমাজে বিভাজন সৃষ্টিকারী একটি আন্দোলন মনে করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—নারীবাদ আসলে কী? পশ্চিমা নারীবাদ কী শিক্ষা দেয়? আর ইসলাম নারীর অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কী বলে? চলুন বিশ্লেষণ করি।
নারীবাদ কি?
নারীবাদ (Feminism) হলো একটি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মতবাদ ও আন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য হলো—নারী ও পুরুষের মাঝে সমান অধিকার ও সমান মর্যাদা নিশ্চিত করা। নারীবাদ নারীদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য, শোষণ, সহিংসতা ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নারীর স্বাধীনতা, সম্মান ও সমতা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
নারীবাদের লক্ষ ও উদ্দেশ্য:
ইতিহাস থেকে জানা যায়, নারীবাদীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামনে এসেছে।নারীবাদীগণ যেসব লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সোচ্চার সেগুলো হলো:
- রাজনীতি, শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র ও আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
- সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য, বঞ্চনা ও শোষণ প্রতিরোধ করা।
- নারীরা যেন চাকরি, শিক্ষা, বিয়ে বা জীবনযাপন সম্পর্কে নিজ সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে সে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
- যৌন হয়রানি, গৃহনির্যাতন, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণসহ সব ধরণের নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।
- রাজনীতি, মিডিয়া, শিক্ষা, এবং সমাজের সব স্তরে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
- কর্মসংস্থান, বেতন, পদোন্নতি ইত্যাদিতে নারীকে পুরুষের সমান সুযোগ দেওয়া।
- এমন সমাজ গঠন যেখানে নারীকে দুর্বল বা অধীনস্থ হিসেবে দেখা হবে না।
- নারীদের শুধু অধিকার নয়, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সম্মান নিশ্চিত করা।
- নারীর নিরাপত্তা, উত্তরাধিকার, কর্মসংস্থান ইত্যাদির ক্ষেত্রে আইনি সহায়তা ও সুরক্ষা তৈরি করা।
পশ্চিমা নারীবাদ ধারণার সূত্রপাত
১৮–১৯ শতকে পশ্চিমা দেশগুলোতে নারীকে “দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক” হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তার বিপরীতেই শুরু হয় নারীবাদ আলোচনা। পশ্চিমা নারীবাদ মূলত ইউরোপ ও আমেরিকার প্রেক্ষাপটে গঠিত নারীবাদের ধারা। তবে এটি প্রথম সামনে আসে ১৮৯৩ সালে। নিউজিল্যান্ড বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নারীদের ভোটাধিকার দেয়ার মাধ্যমে নারীবাদের সূত্রপাত হয়। এরপর ধীরে ধীরে নারীবাদ ইস্যুটিকে লুফে নেয় আমেরিকা ও ইউরোপ। নিচে নারীবাদের কয়েকটি স্তর উল্লেখ করা হলো:
প্রথম তরঙ্গ- নারীর ভোটাধিকার (- ১৯৬০ পর্যন্ত) :
পশ্চিমা দেশগুলোতে নারী “দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক” মর্যাদা পেত। ১৮৪৮ সালে নারীর নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে সেনেকা ফলস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর যুক্তরাজ্যে নারীর ভোটাধিকারের দাবীতে “সাফ্রাজেট আন্দোলন” নামে নারী আন্দোলন হয়।পরিস্থিতি বুঝে নিউজিল্যান্ড ১৮৯৩ সালে ও অস্ট্রেলিয়া ১৯০২ সালে নারীদের ভোটাধিকার দেয়। ১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র একই পথ অনুসরণ করে। যুক্তরাজ্য ১৯১৮ সালে শুধু ধনী/ বিত্তবান নারীদের ভোটাধিকার দিলেও আন্দোলনের মূখে ১৯২৮ সালে সব নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করে।