Website SEO Specialist

বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান : ধরণ, শ্রেণিবিন্যাস ও কার্যক্রম বিশ্লেষণ

আমাদের এ দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও কর্পোরেশন। যদিও এসব প্রতিষ্ঠানের ধরন ভিন্ন, তবে এগুলো তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারকে সহায়তা করে। এগুলো অলাভজনক এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সরকারের রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়।

রাজাকার এর ঠাই নাই বাংলাদেশে

বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান: সংজ্ঞা, ধরন ও কার্যক্রম

সরকারি প্রতিষ্ঠান হলো সেইসব সংস্থা, যেগুলো সম্পূর্ণরূপে সরকারের রাজস্ব খাতের ব্যয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোর অংশ হিসেবে কাজ করে এবং জনগণের কল্যাণে নীতিনির্ধারণ ও সেবা প্রদান করে।

বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ধরন:

সরকারের নীতি বাস্তবায়নকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত হয়ে থাকে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

মন্ত্রণালয়:

মন্ত্রণালয় হলো একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যা একটি বিশেষ খাত বা সেক্টরের জন্য দায়িত্বশীল। প্রতিটি মন্ত্রণালয় দেশের একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি বা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। মন্ত্রণালয়ের প্রধান কর্মকর্তা বা মন্ত্রী এই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। উদাহরণস্বরূপ:

  • শিক্ষা মন্ত্রণালয়,
  • স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়,
  • কৃষি মন্ত্রণালয় ইত্যাদি।

মন্ত্রণালয়ের কাজ হলো, সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, আইন প্রণয়ন এবং জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে কাজ করা।

অধিদপ্তর:

অধিদপ্তর হলো একটি বিশেষায়িত সরকারী প্রতিষ্ঠান যা কোনো নির্দিষ্ট খাতের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটি সাধারণত একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ:

  • শিক্ষা অধিদপ্তর,
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,
  • বন অধিদপ্তর ইত্যাদি।

অধিদপ্তরের দায়িত্ব হলো মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা এবং সংশ্লিষ্ট খাতের সেবা প্রদান করা।

পরিদপ্তর:

পরিদপ্তর একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান যা একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে। পরিদপ্তর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মপ্রণালী বা কাজের কার্যক্রম নিরীক্ষণ এবং বাস্তবায়ন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ:

  • ক্রীড়া পরিদপ্তর,
  • প্রতিরক্ষা ক্রয় মহা পরিদপ্তর ইত্যাদি।

বিভাগ:

বিভাগ হলো একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের একটি উপবিভাগ। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে বিভাগ অন্যতম। বিভাগ সাধারণত বিভিন্ন বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিভাগ সাধারণত একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। স্থানীয় প্রশাসন ও কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করে। উদাহরণস্বরূপ:

  • স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ,
  • কৃষি বিভাগ
  • স্থানীয় সরকার বিভাগ,
  • মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ,
  • সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ইত্যাদি।

এই সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের পরিকল্পনা, নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করে থাকে। তারা সরকারের নির্দেশনা অনুসারে জনসেবার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে।

কার্যালয়:

কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যালয় নামে পরিচিত। এসব প্রতিষ্ঠানের নামের শেষে কার্যালয় শব্দ আছে। যেমন:

  • প্রধানমন্ত্রির কার্যালয়,
  • রাষ্ট্রপতির কার্যালয়,
  • বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়,
  • জেলা প্রশাসকের কার্যালয়.
  • উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ইত্যাদি।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান:

যে সকল প্রতিষ্ঠান সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত হলেও নিজস্ব আইন ও বিধি দ্বারা পরিচালিত হয়, সেগুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান। সাধারণত, সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে এইসব প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আইন, বিধি, বিধিমালা, প্রবিধান ও সাংগঠনিক কাঠামো বিদ্যমান। এছাড়া, সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব কিছু আয়ও থাকে। কয়েকটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলো:

  • বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ। যেগুলোকে আমরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলে থাকি। যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
  • ক্যাডেট কলেজসমূহ,
  • বিভিন্ন বোর্ড (বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, তাত বোর্ড),
  • কর্পোরেশন, কমিশন,
  • ইনস্টিটিউট,
  • কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি।

আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান

যেসকল প্রতিষ্ঠান সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি নিজস্ব আয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, সেগুলো আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বলে পরিচিত। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট বাজেটের প্রায় ৭৫% সরকারি অর্থায়ন থেকে আসে, আর অবশিষ্ট ২৫% তাদের নিজস্ব কর্মকাণ্ড, সেবা প্রদান ও অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সরকারি নিয়ন্ত্রণের অধীনে বেশি থাকে এবং তাদের নীতিনির্ধারণ ও কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন:

 
  • বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন,
  • পৌরসভা,
  • ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদি।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বলতে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা সম্পদকে বোঝায়, যা সরকার কর্তৃক মালিকানাধীন, পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত, সরকার জনগণের স্বার্থে অর্থনীতি, শিল্প, জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাত রাষ্ট্রায়ত্তভাবে পরিচালনা করে।

 
  • বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (BPDB)
  • বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (BPC)
  • বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (BRTC)
  • বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স
  • বাংলাদেশ রেলওয়ে;
  • সোনালি, রুপালি, অগ্রণী, জনতা ব্যাংক;
  • টেলিযোগাযোগ/ বিটিসিএল;
  • তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো সাধারণত লাভের চেয়ে জনসেবাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিচালিত হয়।

আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান

আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান এর আওতাভুক্ত। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সরাসরি সরকারি নয়। তবে সরকারি অর্থায়ন, অনুদান ও নির্দেশনায় পরিচালিত হয়। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের সমস্ত চাহিদা সম্পূর্ণভাবে মেটাতে পারে না বা মেটায় না। এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় খুব সীমিত। মূলত সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে এদের অগ্রগতি সাধিত হয়। সরকারি উন্নয়ন বাজেট ও অনুদানের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়।

 
  • বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান,
  • বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
  • জনসেবামূলক সংস্থা,
  • এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন: কলেজ, ‍বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যায়, মাদ্রাসা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *