বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের জন্য পেনশন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা। সরকারি চাকরিজীবীরা চাকরি শেষে মাসিক পেনশন পেয়ে থাকেন। এটি তাদের অবসরকালীন জীবনে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত হলেই সে প্রতিষ্ঠান সরকারি তা নয়। আবার সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেই সেসব প্রতিষ্ঠানের পেনশন সুবিধা আছে তাও নয়। প্রতিষ্ঠান ভেদে কর্মচারীদের অবসর ভাতা সুবিধা আছে এবং নেই।
যেসব প্রতিষ্ঠোনে পেনশন সুবিধা আছে
রাজস্বখাতভুক্ত কর্মচারীদের পেনশন:
সরকারের রাজস্ব খাতের অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের অবসর ভাতা তথা পেনশন সুবিধা আছে। অর্থাৎ সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা আছে। সরকারের রাজস্ব তহবিল হতে এসকল কর্মচারীর অবসর ভাতা পরিশোধ করা হয়ে থাকে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পেনশন:
এছাড়া কিছু স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। চার শতাধিক এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০ টিরও কম প্রতিষ্ঠানে পেনশন সুবিধা আছে। এসকল প্রতিষ্ঠান নিজস্ব তহবিল সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে পেনশন সুবিধা চালু করেছে। নিজস্ব সৃষ্ট তহবিল হতে তারা পেনশন পরিশোধ করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নে পেনশন সুবিধা চালু আছে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলো:
- বাংলাদেশ তাত বোর্ড;
- বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড;
- জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
সরকারি কর্মচারীদের পেনশন প্রাপ্যতার কর্মকাল
পেনশন প্রাপ্যতার জন্য কর্মকাল (পেনশন পাওয়ার সময়) সাধারণত সরকারি চাকরিতে ২৫ বছর। তবে এটি বিভিন্ন চাকরি ও দেশের নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে, সাধারণত পেনশন প্রাপ্যতার জন্য নিম্নলিখিত কিছু শর্ত থাকে:
- জীবিত ও কর্মক্ষম কর্মচারীর কর্মকালের মেয়াদ: সরকারি চাকরিতে পেনশন পাওয়ার জন্য অন্তত ২৫ বছর কর্মকাল প্রয়োজন। অর্থাৎ, আপনাকে ২৫ বছর সরকারি চাকরিতে কাজ করতে হবে পেনশন পাওয়ার জন্য।
- অক্ষম কর্মচারীর কর্মকালের মেয়াদ: কোন কর্মচারী ন্যূনতম ৫ বছর চাকরি করার পর অক্ষম হলে পেনশন পাবেন। মানসিক বা শারীরিকভাবে অক্ষম হতে পারে। এজন্য মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক তাকে চাকরিতে অক্ষম ঘোষণা করতে হবে।
- মৃত কর্মচারীর ক্ষেত্রে কর্মকাল: কোন কর্মচারী ন্যূনতম ৫ বছর চাকরি করার পর মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবার পেনশন পাবেন।
অর্থাৎ পেনশন পাবার জন্য ন্যুনতম ৫ বছর চাকরি করতে হবে। পাঁচ বছর পর কর্মচারী অক্ষম হলে বা মৃত্যুবরণ করলে পেনশন যোগ্য হবেন। জীবিত এবং অক্ষম না হলে পেনশন পাবার জন্য ২৫ বছর চাকরি করতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ সময় ১৫ বছর করার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে যদি কেউ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই চাকরি ছেড়ে দিলে পেনশন পাবেন না। সেটি স্বেচ্ছায় বা অন্য কারণে হউক। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রভিডেন্ট ফান্ড (গ্রাচুইটি বা অন্য সুবিধা) পাওয়ার সুযোগ থাকে। পেনশন প্রাপ্য হতে হলে তার অবসর গ্রহণ সঠিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
কত টাকা পেনশন পাবেন?
কর্মজীবন শেষে কত টাকা পেনশন অনেক কর্মচারী করতে চান। না জানার কারণে হিসাবরক্ষণ অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। আবার অনেকে লজ্জায় কাউকে জিজ্ঞেস করতে চায় না। ফলে, অজানাই থেকে যায়। এখানে পেনশনের হিসাব উদাহরণ আকারে তুলে ধরা হলো:
উদাহরণ-১। ধরা যাক, একজন কর্মচারী ৩০ বছর চাকরি করেছেন। তার সর্বশেষ মাসিক মূল বেতন টাকা=২০,০০০/- মাত্র। এক্ষেত্রে তার মাসিক নীট পেনশন হবে, ২০,০০০ এর ৯০%=১৮,০০০ ÷ ২= ৯,০০০ + ১,৫০০= ১০,৫০০/- মাত্র।
এখানে, ৯০% হলো সরকার নির্ধারিত মোট পেনশনযোগ্য টাকা। দুই হলো মোট পেনশনযোগ্য টাকাকে দুই ভাগে ভাগ। যার একভাগ গ্রাচুইটির জন্য এবং একভাগ মাসিক পেনশনের জন্য। টাকা ১,৫০০/- হলো চিকিৎসা সহায়ক ভাতা।

উদাহরণ-২। আবার, তার চাকরি ১২ হলে, তার পেনশন হবে, ২০,০০০ এর ৪৩%=৮,৬০০ ÷ ২= ৪,৩০০ + ১,৫০০= ৫,৮০০/- মাত্র।
এখানে, ৪৩% হলো সরকার নির্ধারিত তার মোট পেনশনযোগ্য টাকা। দুই হলো মোট পেনশনযোগ্য টাকাকে দুই ভাগে ভাগ। যার একভাগ গ্রাচুইটির জন্য এবং একভাগ মাসিক পেনশনের জন্য। টাকা ১,৫০০/- হলো চিকিৎসা সহায়ক ভাতা।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, মাসকি নীট পেনশন প্রতি জুলাই মাসে ৫% হারে বৃদ্ধি পাবে।
কিভাবে বুঝবেন আপনার চাকরি রাজস্বখাতভুক্ত কিনা
আপনার চাকরি রাজস্বখাতভুক্ত কি না, তা বুঝতে কিছু মূল বিষয় রয়েছে। সাধারণভাবে, রাজস্বখাতভুক্ত চাকরি বলতে সেই চাকরিকে বোঝায়। যা সরকারের নিয়মিত আয় বা বাজেটের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়। এটি সাধারণত সরকারি দপ্তর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। এখানে কয়েকটি উপায় দেওয়া হলো:
- চাকরির ধরন: যদি আপনি কোনো সরকারি দপ্তর বা সংস্থায় কাজ করেন এবং আপনার বেতন রাজস্ব খাতের আওতাভুক্ত হয়, তাহলে সেটা সাধারণত রাজস্বখাতভুক্ত চাকরি।
- নিয়োগ পত্র ও দাপ্তরিক তথ্য: আপনার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং নিয়োগ পত্রে বা কোনো দাপ্তরিক নথিতে “রাজস্বখাতভুক্ত” লেখা থাকতে পারে। যদি থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবে এটি রাজস্বখাতভুক্ত চাকরি।
চাকরি রাজস্বখাতভুক্ত কিনা বুঝার সহজ উপায়:
সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য ব্যয় অনলাইন পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই পদ্ধতির নাম আইবাস++ (Ibas++)। আইবাস++ হতে বেতন পেতে পে-ফিক্সেশন করতে হয়। পে-ফিক্সেশন করার পর সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিস তা ভেরিফাই করবে। এরপর একটি ভেরিফিকেশন নম্বর বসবে। আপনার পে-ফিক্সেশনে এই ভেরিফিকেশন নম্বরটি বসলেই আপনি রাজস্বখাত ভুক্ত কর্মচারী। আইবাস++ হতে ইএফটির মাধ্যমে আপনার বেতন হবে।
ভেরিফিকেশন নম্বরের ধরণ: ভেরিফিকেশন নম্বর অংক দিয়ে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ভেরিফিকেশন নম্বর ৬ হতে ৯ অংকের হয়ে থাকে। কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের ৬ ডিজিট আবার কোন প্রতিষ্ঠানের ৯ ডিজিট হয়।
ছয় ডিজিটের নম্বর ০০০০-০০ প্যাটার্নে হয়। আর ৯ ডিজিটের নম্বর ০০০০-০০০০০প্যাটার্নের। প্রথম চার ডিজিট’র পর ড্যাশ চিহ্ন হবে। তারপর অবশিষ্ট ২,৩ ৪ বা ৫ ডিজিট।