জিপিএফ লোন, যা সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (GPF) থেকে অগ্রিম ঋণ হিসেবে পরিচিত, সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুবিধা। এটি ফেরতযোগ্য ও অফেরতযোগ্য উভয় ধরনের হতে পারে। মূলত, এটি কর্মচারীর বয়সের উপর নির্ভরশীল। যদি কর্মচারীর বয়স ৫২ বছরের বেশি হয়, তবে তিনি অফেরতযোগ্য অগ্রিম গ্রহণের যোগ্য হবেন। অন্যথায়, ফেরতযোগ্য অগ্রিম নিতে হবে।
জিপিএফ অগ্রিম : ঋণ
ভবিষ্য তহবিল থেকে টাকা উত্তোলনকে ঋণ বলা যায়। আবার অগ্রিম বললেও ভুল হবে না। ধরণভেদে এটিকে জিপিএফ লোন এবং অগ্রিম উভয়টিই বলা যায়। এটি স্পষ্ট হওয়ার জন্য ঋণ ও অগ্রিম সম্পর্কে জানতে হবে।
ঋণ: ঋণ হলো এমন একটি অর্থনৈতিক লেনদেন। যেখানে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অন্য থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার নেয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সেটি ফেরত দেয়। অর্থাৎ, যে টাকা ফেরত দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে সেটিই ঋণ। তদুপরি, ঋণের সাথে সুদ বা সার্ভিস চার্জ যুক্ত হতে পারে, যা ধারগ্রহীতার পরিশোধের পরিমাণ বাড়ায়।
অগ্রিম: পাওনা কিছু সময়ের আগে নেয়া হলে তাকে অগ্রিম বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে নিজের প্রাপ্য কিছু নেয়ার নামই অগ্রিম। যেহেতু এটি নিজের, তাই এটি ফেরত দিতে হয় না। অর্থাৎ নিজের পাওনা বা জমা/ আমানত থেকে নির্ধারিত সময়ের আগে উত্তোলন করা। যা ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই সেটিই অগ্রিম।
জিপিএফ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন….
কর্মচারীর বয়স ৫২ বছরের কম হলে জিপিএফ হতে উত্তোলন করা টাকা ফেরত দিতে হয়। তাই এটি একটি ঋণ। এই ঋণের জন্য খুব সামান্য সার্ভিস চার্জ বা সুদ দিতে হয়। আবার, এ উত্তোলন অফেরতযোগ্য হলে তা অগ্রিম। যা নিলে ফেরত দিতে হয় তা ঋণ। ফেরত দিতে না হলে তা অগ্রিম। হউক সেটি নিজের আমানত, জমা বা প্রাপ্য।
সুতরাং, জিপিএফ বা সিপিএফ হতে উত্তোলন ফেরত দিতে হলে তা ঋণ। আর অফেরতযোগ্য হলে তা অগ্রিম। কর্মচারীর বয়স ৫২ বছরের কম হলে তা ঋণ। ৫২ বছরের বেশি হলে তা অগ্রিম।
জিপিএফ লোন কি অফেরতযোগ্য?
ফেরতযোগ্য ও অফেরতযোগ্য—উভয়ভাবেই সাধারণ ভবিষ্য তহবিল থেকে অগ্রিম গ্রহণ করা যায়। তবে, এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে কর্মচারীর বয়সের উপর। যদি কর্মচারীর বয়স ৫২ বছরের বেশি হয়, তাহলে তিনি অফেরতযোগ্য অগ্রিম গ্রহণ করতে পারবেন। অন্যদিকে, যদি বয়স কম হয়, তবে ফেরতযোগ্য অগ্রিম নিতে হবে।
কত টাকা জিপিএফ লোন নেওয়া যায়?
জিপিএফ লোনের পরিমাণ দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:
জমার পরিমাণ।
ঋণের খাত।
গৃহ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় বা গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্যে মোট জমার ৮০% পর্যন্ত অগ্রিম নেওয়া যায়। তবে, বাড়িঘর মেরামত বা অন্যান্য খাতে এই হার ৭৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাশাপাশি, মোট ঋণের পরিমাণ কর্মচারীর ৩৬ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ বা তার কম হতে হবে। অর্থাৎ, ৮০% বা ৭৫% এবং ৩৬ মাসের মূল বেতন—যেটি কম হবে সেটি প্রযোজ্য হবে। জিপিএফ তহবিলের হিসাব…

একটি অগ্রিম থাকা অবস্থায় আরেকটি অগ্রিম নেয়া যায়?
একজন কর্মচারী শুরু থেকে যত টাকা জমা করেছেন। তার ৮০% পর্যন্ত অগ্রিম নিতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি শুরু থেকে মোট জমা টাকা ৫,০০,০০০/- হয়, তাহলে সর্বোচ্চ ৪,০০,০০০/- পর্যন্ত অগ্রিম ঋণ নেওয়া যাবে।
ধরা যাক, কোনো কর্মচারী তার মোট জমা পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে প্রথমে চার লক্ষ টাকা অগ্রিম ঋণ নিয়েছেন। এরপর, দুই বছর কিস্তি পরিশোধ করার পর তার মোট জমা টাকা ৬,০০,০০০/- এ পৌঁছেছে। এখন, যদি তিনি পুনরায় ঋণ নিতে চান, তাহলে মাত্র ৮০,০০০/- নিতে পারবেন। কারণ, ৬,০০,০০০/- এর ৮০% হয় ৪,৮০,০০০/-, যা থেকে চলমান ঋণ ৪,০০,০০০/- বাদ গেলে অবশিষ্ট থাকে ৮০,০০০/-।
তবে, একটি অগ্রিম ঋণ সম্পূর্ণ পরিশোধ করার পর, মোট জমার উপর আবার ৮০% পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে।
ভবিষ্য তহবিল হতে অগ্রিম ঋণের কিস্তির সংখ্যা:
অনেক কর্মচারী ভবিষ্যৎ তহবিল থেকে জিপিএফ লোন নিতে চান। তবে, পরিশোধ পদ্ধতি না জানার কারণে তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন।
যে কোনো পরিমাণ ঋণই হোক না কেন, পরিশোধ করতে হবে সর্বনিম্ন ১২ এবং সর্বোচ্চ ৪৮ কিস্তিতে। মোট ঋণের পরিমাণ কিস্তির সংখ্যার সাথে ভাগ করে প্রতি মাসের বেতন থেকে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।
এছাড়া, সুদ বা সার্ভিস চার্জ হিসেবে সম্পূর্ণ কিস্তি পরিশোধ শেষে একটি অতিরিক্ত কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।
সাধারন ভবিষ্য তহবিল হতে অগ্রিম উত্তোলনের আবেদন পদ্ধতি:
সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল থেকে অগ্রিম উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন দাখিল করতে হয়। এজন্য সরকার নির্ধারিত জিপিএফ লোন এর প্রেসক্রাইব ফরম রয়েছে। পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে হাতে পূরণ করা যায়। ওয়ার্ড ফাইলেও কম্পিউটারের মাধ্যমে কম্পোজ করা যায়।
সাধারণত আবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে হয়। “যথাযথ কর্তৃপক্ষ” বলতে কর্মচারী যে অফিসে কর্মরত আছেন, সেই অফিসের কর্মকর্তাকে বুঝানো হয়। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তার যথাযথ কর্তৃপক্ষ। আর “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ” বলতে নিয়োগকারী বা পেনশন অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষকে বুঝানো হয়। যার বরাবর যোগদানপত্র দেয়া হয়, তিনিই নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ।
নির্ধারিত ফরমটি যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর, আবেদনকারীকে ফরমটি দিতে হবে। তারপরে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর নিতে হবে। এরপর, ফরমটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত অগ্রগামী পত্রের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করতে হবে।
জিপিএফ লোন এর টাকা কিভাবে পাওয়া যাবে?
আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দেওয়ার পর তিনি জিপিএফ লোন অনুমোদন করবেন। এরপর, অনুমোদিত টাকা সাধারণত একাউন্টপেয়ী চেকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। অনেক অফিস ইএফটির মাধ্যমেও পরিশোধ করে থাকে। চেক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে, যে অফিসের মাধ্যমে আবেদন জমা হয়েছে, সেই অফিসের মাধ্যমেই চেক হাতে পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ/অনুমোদনকারী → যথাযথ কর্তৃপক্ষ/আবেদনকারীর অফিস → আবেদনকারী।