প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীগণ কর্মরত, পিআরএল ভোগরত, অবসরকালীন কিংবা মৃত্যুজনিত কারণে তিনি বা তার পরিবার সরকারের কাছ থেকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। তারমধ্যে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদান অন্যতম।
কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান:
কর্মচারীর নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের রোগ ও চিকিৎসার ধরণের ভিত্তিতে এই প্রতিষ্ঠান ০২ (দুই) ধরণের চিকিৎসা অনুদান প্রদান করে থাকে। যথা:
০১। জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদান:
০২। কল্যাণ বোর্ডের সাধারন রোগের চিকিৎসা অনুদান।
জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদান:
কর্মরত সরকারি কর্মচারীর নিজের জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা ব্য়য় লাঘবের জন্য চাকরি জীবনে এক বা একাধিকবারে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। জটিল ও ব্যয়বহুল রোগগুলো হলো:
- ক্যান্সার;
- হৃদরোগ (ব্লক, ওপেন হার্ট সার্জারি ও অন্যান্য);
- কিডনি-ব্যাধি;
- হেপাটাইটিস;
- ডায়াবেটিস-মেলিটাস;
- পক্ষাঘাত;
- বক্ষব্যাধি;
- কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন ও বিয়োজন;
- দূর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়া; এবং
- কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড কোন রোগকে জটিল ও ব্যয়বহুল মনে করলে তা এর আওতায় পরবে।
এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে শুধু কর্মরত কর্মচারী নিজের জন্য জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ অনুদান শুধু প্রধান কার্যালয়, ঢাকা হতে প্রদান করা হয়। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে ফরম ডাউনলোড করতে হয়। ফরমে বর্ণিত নিয়মাবলী ও নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনের হার্ডকপি ডাকযোগে, কুরিয়ার সার্ভিস বা সরাসরি প্রেরণ করতে পারেন। জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার অনুদানের আবেদনের জন্য এখানে ক্লিক করুন…
এখানে লক্ষণীয়:
অনুদানের ০৩ (তিন) লক্ষ টাকা আপনি একবার আবেদন করেই পেতে পারেন। আবার, প্রথমবার ০১ (এক) লক্ষ টাকা পেলে ২য় বার আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ২য় বার সর্বোচ্চ ০২ (দুই) লক্ষ টাকা পাবেন। আবার, ২য় আবেদনেও ০২ লক্ষ টাকার কম বা ০১ (এক) লক্ষ পেলে ৩য় বার আবেদন করার সেুযোগ পাবেন। অর্থাৎ অনুদানের কোটা ০৩ লক্ষ পূরণ হওয়া পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।
চিকিৎসা অনুদান পাবার জন্য যেভাবে আবেদন করবেন:
কল্যাণ বোর্ডের জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদান আবেদন অনলাইনে পূরণ করতে হয়। আবেদন দাখিল করতে যেসকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে তা হলো:
১. কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদানের নির্দিষ্ট লিংক-এ ক্লিক করুন। অথবা এখানে ক্লিক করুন।
২. মূল পেজে প্রবেশের আগে এ অনুদানের তথ্যসমূহ এবং অনলাইনে আবেদন করার নিয়মাবলী দেখতে পাবেন। তথ্যসমূহ এবং নিয়মাবলী চাইলে ডাউনলোড করে দেখতে পারবেন।
৩. ডান পাশে উপরে থাকা রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করে রেজিস্ট্রেশন করুন।
৪. এরপর পরের ধাপ বাটনে ক্লিক করলে নতুন একটি পেজ ওপেন হবে। অন্যান্য চাহিত তথ্য পূরণ করে আবেদন চূড়ান্ত দাখিল বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৫. আবেদন চূড়ান্ত দাখিল করুন বাটনে ক্লিক করলে ফরমের পিডিএফ কপি পাওয়া পাবে। এটি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে হবে। এই আবেদন ফরমের ২য় পৃষ্ঠায় চাহিত কাগজেপত্রের তালিকা দেয়া আছে।
৬. নিয়মাবলী অনুযায়ী কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে। কিছু কাগজ মূল এবং কিছু ফটোকপি দিতে হয়।
৭. এরপর আবেদন ফরম এবং এর সাথে সংযুক্ত কাগজপত্র অফিস প্রধানের অগ্রগামী পত্রের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে। অর্থাৎ বর্ণিত কাগজের হার্ডকপি কল্যাণ বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড, প্রধান কার্যালয়, ১ম ১২তলা সরকারি অফিস ভবন, সেগুনবাগিচা, ঢাকা বরাবরে একটি ফরওয়ার্ডিং চিঠির মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে।
অফিস প্রধানগণ:
এখানে উল্লেখ্য যে, আবেদন ডাকযোগে, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে। অফিসে সরাসরিও জমা দেয়া যাবে। আবেদনকারী নিজেই অফিস প্রধান হলে তার উর্ধতন অফিসের অফিস প্রধানের প্রত্যয়ন অগ্রগামী পত্র নিতে হবে। নূন্যতম জেলা অফিসের মাধ্যমে আবেদন প্রেরণ করতে হবে। যে অফিসের জেলা অফিস নেই তারা বিভাগীয় অফিস হতে প্রত্যয়ন নিবেন। বিভাগীয় অফিস না থাকলে প্রধান কার্যালয় হতে নিতে হবে।
জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
জটিল ও ব্য়য়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদানের জন্য আবেদনের সাথে যে কাগজগুলো অবশ্যই জমা করতে হয় তা হলো:
১। চিকিৎসা বাবদ ঔষধ ক্রয়ের ভাউচার, বিভিন্ন পরীক্ষা/টেস্ট, ক্লিনিক বা হাসপাতালের অপারেশন বা অন্যকোন বিলের মূলকপি (যাতায়াত ব্যয় ও হোটেল ভাড়া ব্যতীত);
২। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকলে মূল ছাড়পত্র (ভর্তি, অপারেশন বা কেবিন ভাড়ার বিল দাখিল করলে অবশ্যই তার ডিজচার্জ/ছাড়পত্র দাখিল করতে হবে);
৩। পে-ফিক্সেশনের ফটোকপি, MICR চেক বা এনালগ চেক ও ব্যাংক স্টেটমেন্টের ফটোকপি, প্রেসক্রিপশন ও রিপোর্টের ফটোকপি, তারিখ, ধরণ ও খরচের পরিমান উল্লেখসহ খরচের ব্যয়বিবরণী (কর্মচারীর স্বাক্ষরসহ);
৪। নূন্যতম জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তার অগ্রগামী/ ফরওয়ার্ডিং পত্র।
সকল মূল কাগজ ঊর্ধতন অফিসারের প্রতিস্বাক্ষর এবং ফটোকপি ঊর্ধতন অফিসারের সত্যায়ন (সত্যায়িত) করতে হবে।
অবশ্য করণীয়:
অনলাইনে পূরণের পর জটিল ও ব্য়য়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদানের ডাউনলোডকৃত আবেদন ফরমের ২য় পাতায় ডাক্তারের প্রত্যয়নের একটি অনুচ্ছেদ আছে। যে ডাক্তারের অধীনে জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন, তিনি স্বাক্ষর ও তার সীল দিবেন। ডাক্তার অবশ্যই এসোসিয়েট প্রফেসর বা সহযোগী অধ্যাপক এর নিম্নে নহে।
দেশের বাহিরে/ বিদেশে চিকিৎসা নিলে কি করবেন?
অনেকে দেশের বাহিরে চিকিৎসা করেন। কিন্তু তখন আবেদন করেননি বা আবেদন ফরমে দেশের বাহিরের ডাক্তারের স্বাক্ষর নেয়া সম্ভব হয়নি। তারা বাংলাদেশে যে ডাক্তারের অধীন ছিলেন বা যিনি আপনাকে দেশের বাহিরে চিকিৎসা নেয়ার জন্য পরামর্শ বা রেফার্ড করেছেন (এসোসিয়েট প্রফেসর বা সহযোগী অধ্যাপক), তিনি স্বাক্ষর ও সীল দান করবেন। এক্ষেত্রে আবেদনের সাথে প্রত্যয়নকারী ডাক্তারের চিকিৎসাকালীন নূন্যতম ০১ প্রেসক্রিপশন দিতে হবে।
জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদানের মঞ্জুরীকৃত টাকা কিভাবে পাবেন?
বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড প্রায় সকল অনুদানই এখন ইএফটি এর মাধ্যমে প্রদান করে থাকে। আবেদন ফরম পূরণের সময় আবেদনকারীর অনলাইন ব্যাংক হিসাব নম্বর দিতে হয়। ব্যাংক হিসাব নম্বর সাধারনত ১০ থেকে ১৭ সংখ্যার হয়ে থাকে। ব্যাংকের তথ্য পূরণের ক্ষেত্রে যা করণীয়:
১. ব্যাংক হিসাব নম্বর অবশ্যই কর্মচারী/আবেদনকারীর হতে হবে; ব্যাংক হিসাবটি অবশ্যই সচল থাকতে হবে; অনলাইন হিসাব নম্বর দিতে হবে; হিসাব নম্বররের শুরুতে জিরো বা শূন্য থাকলে তাও দিতে হবে। এই জিরো বা শূন্য হিসাবের একটি অংশ; ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম সঠিকভাবে সিলেক্ট করতে হবে।
২. ব্যাংক শাখার নাম সিলেক্ট করলে রাউটিং নম্বর দেখাবে। রাউটিং নম্বর ৯ সংখ্যা বিশিষ্ট হয়। চেকে প্রদত্ত রাউটিং নম্বরের সাথে এটি ক্রস চেক করতে হবে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও MICR চেকের পাতায় হিসাব ও রাউটিং নম্বর স্পস্ট লেখা থাকে।
কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান আবেদন অনুমোদনের পর আপনার নামে টাকা মঞ্জুরীকৃত টাকা কল্যাণ বোর্ড ইএফটির জন্য তাদের ব্যাংকে পাঠাবে। সেই ব্যাংক আপনার হিসাবের অনুকূলে টাকা ইএফটি করবে। যে মাসে অনুদান মঞ্জুর করা হয় সাধারনত সেই মাসেই ইএফটি করা হয়।
সাধারন রোগের চিকিৎসা অনুদান
কর্মচারী নিজের জন্য আমৃত্যু এ সুবিধা পাবেন । একজন কর্মচারী আজীবন তার নিজের চিকিৎসা জনিত ব্যয় নির্বাহের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কর্মরত, অবসরপ্রাপ্ত, জীবিত কিংবা মৃত কর্মচারীর বয়স ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত তার আয়ের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল সদস্যদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিজ, তার স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্তদি ব্যতীত অন্যান্যদের জন্য আবেদন করলে নির্ভরশীল সনদ দিতে হবে।
সাধারন চিকিৎসার আবেদন কিভাবে করবেন এবং বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বছরে ০১ বার আবেদন করতে পারবেন। ১৯.০৮.২০২৫ পরে যারা চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন তারা সর্বোচ্চ টাকা=৬০,০০০/- (ষাট হাজার) অনুদান হিসেবে পাবেন । আবেদনের জন্য এখানে ক্লিক করুন……….