গ্র্যাচুইটি এবং এর হিসাব
গ্রাচুইটি হলো চাকরির শেষে পাওয়া অর্থিক সুবিধা। সাধারণত, এটি কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ ও বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, চাকরির শেষ মাসের মূল বেতন অনুসারে গ্রাচুইটি হিসাব করা হয়। এছাড়া, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতি কর্মবছরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। তবে, গ্রাচুইটি হার প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই, প্রতিষ্ঠান ভেদে গ্রাচুইটি এবং এর হিসাব ভিন্ন। সুৎরাং, এটি চাকরিজীবীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুবিধা।
গ্র্যাচুইটি কি?
ইংরেজি শব্দ Gratuity কে গ্রাচুইটিকে বাংলায় আনুতোষিক বলা হয়। গ্রাচুইটি হলো এক ধরনের আর্থিক সুবিধা, যা কোনো কর্মচারীকে তার দীর্ঘমেয়াদি চাকরির স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠান ভেদে গ্রাচুইটি এবং এর হিসাব ভিন্ন হয়ে থাকে। এটি সাধারণত কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় একটানা চাকরি করার পর পেয়ে তাকে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়া, চাকরি ছাড়ার সময়, অথবা চাকরিরত অবস্থায় মারা গেলে তার পরিবারের জন্য প্রদান করা হয়।
গ্রাচুইটি প্রাপ্যতার জন্য কর্মকাল নির্দিষ্ট থাকে। রাজস্বখাত ও পেনশন আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর সর্বনিম্ন ৫ (পাঁচ) বছর চাকরি করতে হবে। সরকারির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ সময় কম-বেশি হতে পারে। যেমন, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডে গ্রাচুইটি প্রাপ্যতার ন্যূনতম কর্মকাল ০৩ বছর। অর্থাৎ এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ০৩ বছর চাকরি করলেই কেবল গ্রাচুইটি পাবেন। প্রতিষ্ঠানের নিকট গ্রাচুইটি দাবী করতে পারবেন।
পেনশন আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের গ্রাচুইটি সুবিধা:
রাজস্বখাত এবং পেনশন আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ গ্রাচুইটি সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাদের গ্রাচুইটি জাতীয় পেনশন নীতি এবং কর্মচারীর মূল বেতনের সাথে সম্পৃক্ত। এখানে কর্মচারীর কর্মজীবনের শেষ মাসের মূল বেতনকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। প্রথমে মূল বেতন থেকে পেনশনযোগ্য পরিমান বের করা হয়। কারণ কর্মজীবন অনুযায়ী পেনশন বিভিন্ন শতকরা হারে হয়ে থাকে।

পেনশনযোগ্য টাকাকে দুইভাগ করা হয়। একভাগের সমপরিমান টাকা প্রতিমাসে পেনশন হিসেবে প্রদান করা হয়। বাকি এক ভাগকে আনুতোষিকে রূপান্তর করা হয়। এ রূপান্তর হারও চাকরি জীবনের মেয়াদের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়। আনুতোষিকের এ ভাগের প্রতি এক টাকাকে সরকার নির্ধারিত হারের সাথে গুণ করে হিসাব করা হয়।
গ্রাচুইটি হার:
২০১৫ সালের আগে পেনশন ও গ্রাচুইটি প্রাপ্যতার মেয়াদ ছিল ১০ বছর। ২০১৫ সালে তা কমিয়ে ০৫ বছর করা হয়। সেপ্রেক্ষিতে মেয়াদের ভিত্তিতে গ্রাচুইটির হার পূনঃনির্ধারণ করা হয়। সরকার বিভিন্ন সময় গ্রাচুইটি এবং এর হিসাব হার পরিবর্তন করে থকে। বর্তমানে এ হার হলো:
- চাকরিজীবন ০৫ বছর বা তার বেশি কিন্তু ১০ বছরের কম। প্রতি ১ টাকার পরিবর্তে পাবেন – ২৬৫ টাকা।
- চাকরিজীবন ১০ বছর বা তার বেশি কিন্তু ১৫ বছরের কম। প্রতি ১ টাকার পরিবর্তে পাবেন – ২৬০ টাকা।
- চাকরিজীবন ১৫ বছর বা তার বেশি কিন্তু ২০ বছরের কম। প্রতি ১ টাকার পরিবর্তে পাবেন – ২৪৫ টাকা।
- চাকরিজীবন ২০ বছর বা তার বেশি । প্রতি ১ টাকার পরিবর্তে পাবেন – ২৩০ টাকা।
বাংলাদেশে গ্রাচুইটি এবং এর হিসাব:
অনেক কর্মচারী গ্রাচুইটি হিসাব করতে চান। নিজে না জানার কারণে হিসাবরক্ষণ অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। আবার অনেকে লজ্জায় কাউকে জিজ্ঞেস করতে চায় না। ফলে, অজানাই থেকে যায়। এখানে গ্রাচুইটি হিসাব উদাহরণ আকারে তুলে ধরা হলো:
উদাহরণ-১।
ধরা যাক, একজন কর্মচারী ৩০ বছর চাকরি করেছেন। তার সর্বশেষ মাসিক মূল বেতন টাকা=২০,০০০/- মাত্র। এক্ষেত্রে তার গ্রাচুইটি হবে, ২০,০০০ এর ৯০%=১৮,০০০ ÷ ২= ৯,০০০ × ২৩০=২০,৭০,০০০/- মাত্র।
এখানে, ৯০% হলো তার মোট পেনশনযোগ্য টাকা। দুই হলো মোট পেনশনযোগ্য টাকাকে দুই ভাগে ভাগ। যার একভাগ গ্রাচুইটির জন্য এবং একভাগ মাসিক পেনশনের জন্য। ২৩০ হলো তার চাকরি ২০ বছরের বেশি রেঞ্জের নির্ধারিত হার।
উদাহরণ-২।
ধরা যাক, কোন কর্মচারী ১২ বছর চাকরি করেছেন। তার গ্রাচুইটি হবে, ২০,০০০ এর ৪৩%=৮,৬০০ ÷ ২= ৪,৩০০ × ২৬০=১১,১৮,০০০/- মাত্র।
এখানে, ৪৩% হলো তার মোট পেনশনযোগ্য টাকা। দুই হলো মোট পেনশনযোগ্য টাকাকে দুই ভাগে ভাগ। যার একভাগ গ্রাচুইটির জন্য এবং একভাগ মাসিক পেনশনের জন্য। ২৬০ হলো তার চাকরি ১০ বছরের বেশি এবং ১৫ বছরের কম রেঞ্জের নির্ধারিত হার।
পেনশন আওতার বাহিরের প্রতিষ্ঠানের গ্রাচুইটি সুবিধা:
সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে পেনশন সুবিধা চালু নেই। তবে, সেসব প্রতিষ্ঠানে আলাদা গ্রাচুইটি সুবিধা আছে। সাধারনভাবে, তাদের গ্রাচুইটি সাধারনত চাকরির মেয়াদ ও মূল বেতনের ভিত্তিতে হিসাব করা হয়। অর্থাৎ কর্মচারীর শেষ মাসের মূল বেতন ধরে গ্রাচুইটি পরিশোধ করা হয়। প্রতিষ্ঠানভেদে প্রতি কর্মবছরের জন্য ১টি বা ২টি মূল বেতনের সমপরিমান টাকা দেয়া হয়। অনেক প্রতিষ্ঠানের এ হার ৩টি মূল বেতনের সমপরিমান হয়ে থাকে। যেমন, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডে একজন কর্মচারী ০৩ বছর চাকরি করলে তিনি গ্রাচুইটি পাবেন। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের গ্রাচুইটি এবং এর হিসাব নিম্নরুপ হবে।
উদাহরণ-
ধরা যাক, কোন প্রতিষ্ঠান এক বছর কর্মকালে ০৩টি মূল বেতন নীতি অনুসরণ করে। কোন কর্মচারী ৩০ বছর ঐ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছে। তার শেষ মাসের মূল বেতন টাকা=২০,০০০/- মাত্র। এক্ষেত্রে তার গ্রাচুইটি হবে, ০৩ × ৩০ × ২০,০০০=১৮,০০,০০০/- মাত্র।