প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীগণ কর্মরত, পিআরএল ভোগরত, অবসরকালীন কিংবা মৃত্যুজনিত কারণে তিনি বা তার পরিবার সরকারের কাছ থেকে নানা রকম আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। তারমধ্যে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান অন্যতম।
কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান কেন দেয়া হয়-
বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারী এবং বোর্ডের তালিকাভুক্ত ২৫টি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীসহ প্রায় ১৯ লক্ষ কর্মচারীর আর্থ সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কল্যাণধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কর্মচারীগণ প্রজাতন্ত্রের জনগণকে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানে সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন।
জনগণের সেবায় নিয়োজিত সরকারী কর্মচারীগণ বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ শারীরিক জটিলতায় ভোগেন। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের ডাক্তারী পরামর্শ সেবা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ডাক্তারী ব্যবস্থাপত্র, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও হাসপাতালে ভর্তির মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। রোগের ধরণ বিশেষে চিকিৎসা ব্যয় বিভিন্ন পরিমানের হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তা সাধ্যের বাহিরে চলে যায়। সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে দুঃখ কিছুটা লাঘব করার জন্য বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড চিকিৎসা অনুদান প্রদান করে থাকে।

কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান:
কর্মচারীর নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের রোগ ও চিকিৎসার ধরণের ভিত্তিতে এই প্রতিষ্ঠান ০২ (দুই) ধরণের চিকিৎসা অনুদান প্রদান করে থাকে। যথা:
০১। জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা অনুদান:
কর্মরত ও পিআরএল ভোগরত সরকারি কর্মচারীর নিজের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য চাকরি জীবনে এক বা একাধিকবারে সর্বোচ্চ ২ (দুই) লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। জটিল ও ব্যয়বহুল রোগগুলো হলো:
- ক্যান্সার;
- হৃদরোগ (ব্লক, ওপেন হার্ট সার্জারি ও অন্যান্য);
- কিডনি-ব্যাধি;
- হেপাটাইটিস;
- ডায়াবেটিস-মেলিটাস;
- পক্ষাঘাত;
- বক্ষব্যাধি;
- কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন ও বিয়োজন;
- দূর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়া; এবং
- কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড কোন রোগকে জটিল ও ব্যয়বহুল মনে করলে তা এর আওতায় পরবে।
এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে শুধু কর্মরত ও পিআরএল ভোগরত কর্মচারী নিজের জন্য জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ অনুদান শুধু প্রধান কার্যালয়, ঢাকা হতে প্রদান করা হয়। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে ফরম ডাউনলোড করতে হয়। ফরমে বর্ণিত নিয়মাবলী ও নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনের হার্ডকপি ডাকযোগে, কুরিয়ার সার্ভিস বা সরাসরি প্রেরণ করতে পারেন। জটিল ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার অনুদানের আবেদনের জন্য এখানে ক্লিক করুন…
০২। কল্যাণ বোর্ডের সাধারন রোগের চিকিৎসা অনুদান:
উপরে বর্ণিত জটিল ও ব্যয়বহুল রোগসহ সকল রোগের চিকিৎসা ব্যয় সাধারন চিকিৎসা অনুদানের আওতায় আসবে। কর্মচারী চাকরিতে যোগদানের তারিখ হতে আমৃত্যু এ আর্থিক সুবিধা পাবেন। হোক তা চাকরিরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত। কর্মচারী মৃত কিংবা জীবিত হলে তার পরিবারের সদস্যগণ কর্মচারীর বয়স ৭৫ (পঁচাত্তর) বছর পর্যন্ত এ অনুদান প্রাপ্য হবেন।
পরিবারের যেসকল সদস্যের চিকিৎসার জন্য আবেদন করা যাবে?
কর্মচারী নিজের জন্য আমৃত্যু এ সুবিধা পাবেন । একজন কর্মচারী আজীবন তার নিজের চিকিৎসা জনিত ব্যয় নির্বাহের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কর্মরত, অবসরপ্রাপ্ত, জীবিত কিংবা মৃত কর্মচারীর বয়স ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত তার আয়ের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল সদস্যদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিজ, তার স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্তদি ব্যতীত অন্যান্যদের জন্য আবেদন করলে নির্ভরশীল সনদ দিতে হবে। নির্ভরশীল সদস্যদের ধরণ:
- কর্মচারীর বয়স ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত তার স্বামী/স্ত্রীর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- কর্মচারীর ছেলের বয়স ২৫ বছর হওয়া পর্যন্ত
- অবিবাহিত মেয়ের বয়স ২৫ বছর হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- কর্মচারীর পিতা-মাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য স্থানীয় সরকার (ইউপি চেয়ারম্যান/ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর) কর্তৃক প্রদত্ত নির্ভরশীল সনদ দিতে হবে।
- যেকোনো বয়সের প্রতিবন্ধি সন্তান ও তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা বোন।
- কর্মচারীর নাবালেক ভাই বা বোন।
কারা সাধারন রোগের চিকিৎসা অনুদানের আবেদন করতে পারবেন?
উপরে বর্ণিত জটিল ও ব্যয়বহুল রোগসহ সকল রোগের চিকিৎসা ব্যয় সাধারন চিকিৎসা অনুদানের আওতায় আসবে। কর্মচারী চাকরিতে যোগদানের তারিখ হতে আমৃত্যু এ আর্থিক সুবিধা পাবেন। হোক তা চাকরিরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত। কর্মচারী মৃত কিংবা জীবিত হলে তার পরিবারের সদস্যগণ কর্মচারীর বয়স ৭৫ (পঁচাত্তর) বছর পর্যন্ত এ অনুদান প্রাপ্য হবেন।
- কর্মচারীর বয়স ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত তার স্বামী/স্ত্রীর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- কর্মচারীর ছেলের বয়স ২৫ বছর হওয়া পর্যন্ত
- অবিবাহিত মেয়ের বয়স ২৫ বছর হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- কর্মচারীর পিতা-মাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য স্থানীয় সরকার (ইউপি চেয়ারম্যান/ পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর) কর্তৃক প্রদত্ত নির্ভরশীল সনদ দিতে হবে।
- যেকোনো বয়সের প্রতিবন্ধি সন্তান ও তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা বোন।
- কর্মচারীর নাবালেক ভাই বা বোন।
যে যে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদানের আবেদনের সুযোগ পাবেন:
বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড নাম হলেও বাংলাদেশের সকল কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদানের আবেদন করার সুযোগ পাবে না। যে সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ তাদের বেতন হতে কল্যাণ তহবিল/ কল্যাণ ও যৌথবীমা তহবিলের চাঁদা কর্তন করেন এবং তা বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডে জমা দেন বা জমা হয় কেবল সেসকল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ কল্যাণ বোর্ডে চিকিৎসা অনুদানের আবেদন করার সুযোগ পাবেন। যে সকল প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারবেন:
১. প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত বেসামরিক কর্মচারীগণ;
২. বোর্ডের তালিকাভুক্ত স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারী;
৩. পুলিশ বিভাগের ০১-১০ গ্রেডের কর্মচারী এবং অন্যান্য আধা-সামরিক বাহিনীর কর্মচারীগণ;
যে সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা আবেদনের সুযোগ পাবেন না:
১. ডাক, তার ও টেলিফোন, বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এবং পুলিশ বাহিনীতে (১১-২০ তম গ্রেড) নিযুক্ত কর্মচারীগণ কল্যাণ বোর্ডে অনুদানের আবেদন করতে পারবে না।
২. সামরিক বাহিনী বা তিন বাহিনী অর্থাৎ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর কোন কর্মচারী আবেদন করতে পারবে না।
৩. বোর্ডের তালিকাভুক্ত নয় এমন স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণও আবেদন করতে পারবেন না।
বোর্ডের তালিকাভুক্ত স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহ:
সরাসরি রাজস্বখাতভুক্ত কর্মচারী/প্রতিষ্ঠান নয়, কিন্তু বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডকে রাজস্বখাতভুক্ত কর্মচারীর ন্যায় চাঁদা (কল্যাণ তহবিল ও যৌথবীমা তহবিল) কর্তন বা প্রদান করে এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ এই বোর্ড হতে অনুদানসমূহ পেয়ে থাকেন। বর্তমানে ২৫টি প্রতিষ্ঠান বোর্ডর তালিকাভুক্ত আছে। তাদের তালিকা হলো:
- ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি);
- বাংলাদেশ চা বোর্ড;
- বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর);
- বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন;
- বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা কাউন্সিল;
- বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড;
- বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র;
- বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড টেরিফ কমিশন;
- রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো;
- মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ;
- জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর;
- ফার্মাসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ;
- হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট;
- অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা;
- বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা);
- ক্যাডেট কলেজসমূহ;
- লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ;
- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি;
- বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর;
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক এন্ড টেকনিক্যাল ডকুমেন্টেশন সেন্টার (বান্সডক);
- বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড;
- বাংলাদেশ হাইটেক-পার্ক কর্তৃপক্ষ;
- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট (বিইএম);
- প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ; এবং
- বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ।
কারা চিকিৎসা অনুদানের জন্য আবেদনকারী হবেন?
কার চিকিৎসার জন্য কে আবেদন করবে অনেক কর্মচারী তা বুঝতে পারেন না। আবেদনকারীর ধারাবাহিকতা নিচে দেয়া হলো:
- চিকিৎসা যারই হোক না কেন কর্মচারী জীবিত হলে তিনিই আবেদনকারী হবেন।
- কর্মচারী মৃত হলে তার স্বামী/স্ত্রী।
- স্বামী/স্ত্রী মৃত হলে তার পিতা-মাতা বা সন্তান। এক্ষেত্রে একাধিক জনের চিকিৎসা হলে যেকোন একজনকে আদেনের ক্ষমতা দিতে হবে।
কোন সময় কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসার আবেদন করবেন?
কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান এর জন্য বছরের যেকোন অফিস কর্মদিবসে আবেদন করতে পারবেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরে ০১ (এক) বার আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ যেকোন ইংরেজি সালের ০১ জানুয়ারি হতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেকোন সময় আবেদন করা যাবে। এভাবে প্রতি ইংরেজি সালে একবার করে আবেদন করতে পারবেন।
চিকিৎসা ব্যয় সংঘটিত হওয়ার ০২ (দুই) বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আবেদনের তারিখের ০২ বছর পূর্বের কাগজপত্র অনুদান পাবার জন্য বিবেচিত হবে। কেউ ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে আবেদন দাখিল করলে ০১ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখের পরবর্তি সময়ের কাগজ দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
চিকিৎসা অনুদানের যেভাবে আবেদন করতে হবে:
কল্যাণ বোর্ডের সাধারন চিকিৎসা অনুদান আবেদন আবেদনকারী কর্তৃক অনলাইনে পূরণের প্রক্রিয়া অক্টোবর/২০২৪ হতে শুরু হয়েছে। সকল বিভাগীয় কার্যালয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে জানুয়ারি/২০২৫ মাসে। আবেদন দাখিল করতে যেসকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে তা হলো:
১. কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সাধারন চিকিৎসা অনুদানের নির্দিষ্ট লিংক-এ ক্লিক করুন। অথবা এখানে ক্লিক করুন।
২. মূল পেজে প্রবেশের আগে সাধারণ চিকিৎসায় অনুদানের তথ্যসমূহ এবং অনলাইনে আবেদন করার নিয়মাবলী দেখতে পাবেন। তথ্যসমূহ এবং নিয়মাবলী চাইলে ডাউনলোড করে দেখতে পারবেন।
৩. ডান পাশে উপরে থাকা রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করুন। রেজিস্ট্রেশন করার জন্য কর্মচারীর ধরণ, কর্মক্ষেত্রের ধরণ, জাতীয় পরিচায়পত্র নম্বর এবং পে-ফিক্সেশনের ভেরিফিকেশন নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। শায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পে-ফিক্সেশনের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের নাম সিলেক্ট করতে হবে।
৪. এরপর পরের ধাপ বাটনে ক্লিক করলে নতুন একটি পেজ ওপেন হবে। এই পেজে কর্মচারীর নাম, পদবি ও অফিস ঠিকানা পূরণ অবস্থায় থাকবে। অন্যান্য চাহিত তথ্য পূরণ করে আবেদন চূড়ান্ত দাখিল বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৫. আবেদন চূড়ান্ত দাখিল করুন বাটনে ক্লিক করলে একটি পূরণকৃত ফরমের পিডিএফ কপি পাওয়া পাবে। এটি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে হবে। এই আবেদন ফরমের ২য় পৃষ্ঠায় চাহিত কাগজেপত্রের তালিকা দেয়া আছে। আরও কী কী করতে হবে তাও উল্লেখ আছে।
৬. নিয়মাবলী অনুযায়ী কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হবে। কিছু কাগজ মূল এবং কিছু ফটোকপি দিতে হয়। মূল কাগজ হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতিস্বাক্ষর নিতে হবে। এবং ফটোকপি হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে।
৭. আবেদন ফরমের নির্ধারিত স্থানে অফিস প্রধান প্রত্যয়ন করবেন। এরপর আবেদন ফরম এবং এর সাথে সংযুক্ত কাগজপত্র অফিস প্রধানের অগ্রগামী পত্রের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে। অর্থাৎ আবেদন ফরম এবং আবেদন ফরমে বর্ণিত কাগজের হার্ডকপি কল্যাণ বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে।
অফিস প্রধানগণ:
এখানে উল্লেখ্য যে, আবেদন ডাকযোগে, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে। অফিসে সরাসরিও জমা দেয়া যাবে। আবেদনকারী নিজেই অফিস প্রধান হলে তার উর্ধতন অফিসের অফিস প্রধানের প্রত্যয়ন অগ্রগামী পত্র নিতে হবে। যে উপজেলা অফিসের জেলা অফিস নেই তারা বিভাগীয় অফিস হতে প্রত্যয়ন নিবেন। বিভাগীয় অফিস না থাকলে প্রধান কার্যালয় হতে নিতে হবে। অফিস ক্রম উপজেলা > জেলা > বিভাগীয় > প্রধান কার্যালয়/ অধিদপ্তর/ সংস্থা > মন্ত্রণালয়ের সচিব।
চিকিৎসা অনুদানের আবেদনের শর্তাবলী ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ:
কল্যাণ বোর্ডের সাধারন চিকিৎসা অনুদানের আবেদন আবেদনকারী কর্তৃক অনলাইনে পূরণের প্রক্রিয়া অক্টোবর/২০২৪ হতে শুরু হয়েছে। সকল বিভাগীয় কার্যালয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে জানুয়ারি/২০২৫ মাসে। আবেদন দাখিল করতে যেসকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে তা হলো:
১. ক্লিনিক/হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকলে মূল ছাড়পত্র;
২. হাসপাতালের ছাড়পত্র ও ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ ক্রয়ের ভাউচার এর মূলকপি (উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত);
৩. ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র ও রিপোর্ট এর ছায়ালিপি (উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত);
৪. খরচের হিসাববিবরণী (কর্মচারীর স্বাক্ষরসহ);
৫. জাতীয় বেতনস্কেল এর ভেরিফিকেশন নম্বরসহ বেতননির্ধারণী বিবরণীর সত্যায়িত ফটোকপি (উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত);
৬. আবেদনকারীর MICR চেকের পাতার ফটোকপি (উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত);
৭. পিতা/মাতা বা ভাই/বোনের ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতার প্রত্যয়নপত্র (ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার মেয়র অথবা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত);
৮. কর্তৃপক্ষের অগ্রায়ন পত্রের মাধ্যমে আবেদন দাখিল করতে হবে। (পিআরএল ভোগরত/ অবসরপ্রাপ্ত/ মৃত কর্মকর্তা/ কর্মচারী ব্যতিত)
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পিআরএল ভোগরত/ অবসরপ্রাপ্ত/ মৃত কর্মকর্তা/ কর্মচারীর আবেদনের ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরের প্রয়োজন নেই
কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান প্রাপ্যতা:
বর্ষপঞ্জি (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) অনুযায়ী বছরে একবার কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান এর জন্য আবেদন করা যেতে পারে। আবেদনকারীকে চিকিৎসা গ্রহণের তারিখের ২ (দুই) বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে। কর্মচারীর জন্য আমৃত্যু চিকিৎসা অনুদান প্রদান করা হলেও, পরিবারের সদস্যদের জন্য অনুদান শুধুমাত্র কর্মচারীর বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। যাতায়াত, অ্যাম্বুলেন্স, অথবা হোটেল বিলের জন্য কোনো অনুদান প্রদান করা হয় না। এছাড়াও, অসম্পূর্ণ, সন্দেহজনক অথবা ত্রুটিপূর্ণ আবেদন বাতিল করার অধিকার কর্তৃপক্ষের রয়েছে।
কোন রোগের কী চিকিৎসার জন্য কত টাকা দেয়া হয়?
রোগ ও চিকিৎসার ধরণ এবং খরচের পরিমানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন হারে সাধারন চিকিৎসা অনুদান প্রদান করা হয়। কমন কিছু রোগ এবং এসব রোগের চিকিৎসার খরচের ভিত্তিতে অনুদানের বিভিন্ন হার নিচে দেয়া হলো:
১। কিডনি, ডায়ালাইসিস, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া, হৃদরোগ, স্ট্রোক, লিভার সিরোসিস ও পিএলআইডিসহ অন্যান্য জটিল রোগের জন্য -৪০,০০০/- মাত্র।
২। সিজার অপারেশন, জরায়ু অপারেশন, মূত্রনালী অপারেশন, পাইলস ও হারনিয়া অপারেশন- ২৫,০০০/- মাত্র।
৩। এ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিকস মেলাইটিস ও চোখের চিকিৎসা- ২০,০০০ – ২৫,০০০/- মাত্র।
৪। জ্বর, সর্দি, কাশি, বাতজ্বর ও অন্যান্য সাধারন রোগের জন্য- ১০,০০০ – ১৫,০০০/- মাত্র।
৫। অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে রোগের ধরন ও খরচের প্রকুতি অনুযায়ী কমিটি অর্থ মঞ্জুরি প্রদান করে থাকে।
অনুদানের বিষয়ে আরও যা জানা দরকার:
এখানে উল্লেখ্য যে, অনুদান মঞ্জুরির এ হার বাস্তবতার নিরিখে পরিবর্তন হতে পারে। কমিটি আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বিল-ভাউচার যাচাই করে এ হার কম-বেশি করে থাকে। কেউ সিজার অপারেশনের ২৫,০০০/- এর কম ভাউচার দিলে তিনি টাকা কম পাবেন। আবার সিজার সময় বা পরবর্তী মা বা শিশুর সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে আইসিইউ-তে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যয় বা খরচও বেশি হবে। খরচ বেশি হলে কাগজ দাখিল করা সাপেক্ষে অনুদানও বেশি পাবেন। এটি সম্পূর্ণ কমিটির বিষয়। তবে খরচ যাই হোক না কেন অনুদানের পরিমান টাকা=৪০,০০০/- এর বেশি হবে না।
চিকিৎসা অনুদানের মঞ্জুরীকৃত টাকা কিভাবে পাবেন?
বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড প্রায় সকল অনুদানই এখন ইএফটি এর মাধ্যমে প্রদান করে থাকে। আবেদন ফরম পূরণের সময় আবেদনকারীর অনলাইন ব্যাংক হিসাব নম্বর দিতে হয়। ব্যাংক হিসাব নম্বর সাধারনত ১০ থেকে ১৭ সংখ্যার হয়ে থাকে। ব্যাংকের তথ্য পূরণের ক্ষেত্রে যা করণীয়:
১. ব্যাংক হিসাব নম্বর অবশ্যই কর্মচারী/আবেদনকারীর হতে হবে।
২. ব্যাংক হিসাবটি অবশ্যই সচল থাকতে হবে।
৩. অনলাইন হিসাব নম্বর দিতে হবে।
৪. হিসাব নম্বররের শুরুতে জিরো বা শূন্য থাকলে তাও দিতে হবে। এই জিরো বা শূন্য হিসাবের একটি অংশ।
৫. ব্যাংকের নাম ও শাখার নাম সঠিকভাবে সিলেক্ট করতে হবে।
৬. ব্যাংক শাখার নাম সিলেক্ট করলে রাউটিং নম্বর দেখাবে। রাউটিং নম্বর ৯ সংখ্যা বিশিষ্ট হয়। চেকে প্রদত্ত রাউটিং নম্বরের সাথে এটি ক্রস চেক করতে হবে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও MICR চেকের পাতায় হিসাব ও রাউটিং নম্বর স্পস্ট লেখা থাকে।
কল্যাণ বোর্ডের চিকিৎসা অনুদান আবেদন অনুমোদনের পর আপনার নামে টাকা মঞ্জুরীকৃত টাকা কল্যাণ বোর্ড ইএফটির জন্য তাদের ব্যাংকে পাঠাবে। সেই ব্যাংক আপনার হিসাবের অনুকূলে টাকা ইএফটি করবে।যে মাসে অনুদান মঞ্জুর করা হয় সাধারনত সেই মাসেই ইএফটি করা হয়।
সতর্কতা:
এখানে উল্লেখ্য যে, আবেদনে কোন জালিয়াতির চেষ্টা করা হলে বা তা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলে আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা পর্যন্ত হতে পারে। তাই আবেদন করার সময় ইচ্ছাকৃত ভূল এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। তথ্য গোপন করা বা ভূল তথ্য দিয়ে আবেদন করা থেকে বিরত থাকুন।
কল্যাণ বোর্ডের অন্যান্য অনুদান ও সেবাসমূহ:
সরকারি কর্মচারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড চিকিৎসা অনুদান ছাড়াও আর যে সকল অনুদান দিয়ে থাকে সেগুলো হলো:
- মাসিক কল্যাণ ভাতা অনুদান;
- যৌথবীমার এককালীন অনুদান;
- দাফন-কাফন/ অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার অনুদান;
- শিক্ষাবৃত্তি অনুদান;
- সরকারি কর্মচারীদের দ্বারা গঠিত ও পরিচালিত ক্লাব এর বার্ষিক অনুদান।
এছাড়াও বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে সেগুলো হলো:
- কর্মচারীদের স্ত্রী-সন্তানদের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান;
- কর্মচারী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে প্রতিবছর বিভাগীয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন;
- বিভিন্ন অফিসের কর্মচারীদেরকে স্বল্প ভাড়ায় বাসে করে অফিসে নিয়ে আসা-যাওয়া;
- কর্মচারীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া প্রদান।
কল্যাণ বোর্ড এবং সরকারি অন্যান্য সকল ধরনের আইন, বিধি ও নিয়মকানুন সংক্রান্ত পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন ও গেজেটের পিডিএফ কপি পেতে এখানে ক্লিক করুন–
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:
প্রশ্ন-১। কর্মচারী বলতে কাদের বুঝায়?
উত্তর: প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ০১ হতে ২০তম গ্রেডের সকল কর্মচারীকে বুঝাবে।
প্রশ্ন-২। কল্যাণ বোর্ডের পরিবারের সজ্ঞা কী?
উত্তর: (ক) কর্মচারী পুরুষ হলে তার স্ত্রী/স্ত্রীগণ; নারী হলে তার স্বামী এবং (খ) কর্মচারীর সাথে একত্রে বসবাসরত এবং তার আয়ের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল সন্তান-সন্তদিগণ, পিতা-মাতা, দত্তক পুত্র (হিন্দু কর্মচারীর ক্ষেত্রে), নাবালেক ভাই এবং অবিবাহিতা, তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা বোন।
প্রশ্ন-৩। কোন কারণে ইএফটি ফেরত গেলে তা আবার পাওয়া যাবে?
উত্তর: হ্যা, পাওয়া যাবে। এজন্য একটি আবেদন দাখিল করতে হবে। কবে আবেদন করেছেন, ডাইরি নম্বর কত, কি কারণে ইএফটি ফেরত যেতে পারে আবেদনে এসব উল্লেখ করতে হবে। সাথে ব্যাংক হিসাবের চেক বইয়ের ফটোকপি সত্যায়িত করে দিতে হবে।