এ্যাড. ফজলে রাব্বি মিয়া (ভেলু) এর প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
এ্যাড. ফজলে রাব্বি মিয়া (ভেলু) ১৫ এপ্রিল ১৯৪৬ সালে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন ফয়জার রহমান এবং মাতা হামিদুন নেছা। ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ও স্পষ্টভাষী ছিলেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্ধুদের মাঝে মূল্যবান কথা বলার জন্য তাকে প্রথমে Valueable, পরে Value এবং শেষে ভেলু নামে ডাকতে শুরু করে। পরবর্তীতে তিনি তার পুরো রাজনৈতিক এলাকায় “ভেলু” নামেই পরিচিত হন।
তিনি গাইবান্ধা কলেজ থেকে বিএ সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে আইন (এলএলবি) ডিগ্রি অর্জন করে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
ছাত্র রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান
ফজলে রাব্বি মিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শুরু অষ্টম শ্রেণিতে, যখন ১৯৫৮ সালে তিনি তৎকালীন মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। গাইবান্ধা সরকারি কলেজে পড়ার সময় তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন এবং স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার কাজেও ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার অবদান গাইবান্ধা অঞ্চলে বিশেষভাবে স্মরণীয়।
জাতীয় রাজনীতিতে এ্যাড. ফজলে রাব্বি মিয়ার অবদান
এ্যাড. ফজলে রাব্বি মিয়া জাতীয় সংসদীয় আসন-৩৩, গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) থেকে মোট ০৭ বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির হয়ে ০৪ বার (১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ১৯৯৬) এবং আওয়ামী লীগের হয়ে ২০০৮, ২০১৪, ও ২০১৮ মোট ০৩ বার নির্বাচিত হন ।
১৯৯০ সালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দশম ও একাদশ সংসদে (২০১৪-২০২২) জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফজলে রাব্বি মিয়ার সামাজিক কর্মকাণ্ড ও জনসেবা:
গাইবান্ধা আইন কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সামাজিক কাজেও সক্রিয় ছিলেন। স্থানীয় উন্নয়ন, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কাজে অবদান রেখেছেন। আইনজীবী হিসেবে তার দক্ষতা, নিয়ম-কানুন বোঝার ক্ষমতা এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষমতা ছিল তার রাজনৈতিক জনপ্রিয়তার একটি বড় অঙ্গ। তার নেতৃত্ব অনেকের কাছে “অনুকরণীয়” হিসেবে বিবেচিত ছিল।
এ্যাড. ফজলে রাব্বি মিয়ার অনন্য ব্যাক্তিত্ব:
তিনি রাজনৈতিক দল ও প্রতীকের ঊর্ধ্বে থেকে সবসময়ই জনসম্পৃক্ত, গ্রহণযোগ্য এবং সমাদৃত নেতা ছিলেন। তার ব্যক্তিত্ব, নৈতিক দৃঢ়তা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা সত্ত্বেও পরবর্তীতে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে টানা চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে তিনি আবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং সেখান থেকেও টানা তিনবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বগুণ ও নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার পদও তার ওপর অর্পিত হয়।
জীবনাবসান:
২০২১ সালে তার পেটে টিউমার ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে ভারতের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক-এ মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জুলাই ২০২২ মৃত্যুবরণ করেন। তার জন্মস্থান গটিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়।